গণমাধ্যমকে হুমকি, সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদ

16

কারাবন্দি সাংবাদিকদের জামিন দাবি, গণমাধ্যমকে হুমকি এবং সাংবাদিক হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন অর্ধশতাধিক সাংবাদিক।
সোমবার এক বিবৃতিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা বলেন, “আমরা বাংলাদেশের শীর্ষ সাংবাদিক সংগঠনগুলোর বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশ এখন মব সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি। গণমাধ্যমও এই জিম্মি দশার বাইরে নয়। সাংবাদিকদের নামে হত্যা মামলা, চাকরিচ্যুতি, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলোর কারণে সাংবাদিক সমাজ এক ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের একাধিক শীর্ষ সংবাদপত্রের কার্যালয়ের সামনে মব সন্ত্রাসীরা গরু জবাই করে জিয়াফতের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে চিহ্নিত মব সন্ত্রাসীরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। ফলে এটি ধারণা করা অমূলক নয় যে, ক্ষমতাধর কোনো মহল এসবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।
বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক তৈমুর ফারুক তুষারের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গত ১১ মাসে মারা দেশে ঢালাও হত্যা মামলাসহ নানা হয়রানিমূলক মামলার আসামি হয়েছে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে। গ্রেপ্তার করা হয় ৩৯ জন সাংবাদিককে। ১৬৮ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সারা দেশের প্রেসক্লাবগুলো থেকে ১০১ জন সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত, বাতিল কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছেন তিন শতাধিক সাংবাদিক। শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। গত ১১ মাসে সহস্রাধিক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো দখল করা হয়েছে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) কার্যালয় ১১ মাস ধরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আইনি প্রতিকার বা জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কারাগারে বন্দি সাংবাদিকরা সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিনা বিচারে মাসের পর মাস কারাবন্দি আছেন সাংবাদিকরা। এগুলো মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকার দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে এই মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে আনবে, গণমাধ্যম কর্মীদের নানা ট্যাগ দিয়ে জুলুম, হয়রানির শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করবে, চাকরির সুরক্ষা দেবে। যাতে করে সাংবাদিকরা নির্ভয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে পারেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি ঘটছে না। ফলে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে সব সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার, সাংবাদিক হয়রানির নিন্দা এবং কারাবন্দি সাংবাদিকদের জামিনের দাবি জানানো হয়। আরও বলা হয়, সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করুন। গণমাধ্যমকে যারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা পরিহার করুন।
বিবৃতিদাতারা হলেন-
১. আবু জাফর সূর্য, সাবেক সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
২. সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)
৩. নজরুল কবীর, সিনিয়র সাংবাদিক
৪. সৈয়দ বোরহান কবির, প্রধান সম্পাদক, বাংলা ইনসাইডার
৫. আকতার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
৬. জাকির হোসেন ইমন, সাবেক সভাপতি, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল (ডিএসইসি)
৭. মোহাম্মদ ফারুক হোসেন (তানভীর), সভাপতি, টিভি ক্যামেরাজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (টিসিএ)
৮. শেখ জামাল, সম্পাদক, দৈনিক মুখপাত্র এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ডিআরইউ
৯. মহসিন কাজী, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)
১০. মাহমুদুল আলম নয়ন, সহসভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)
১১. জামাল উদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক
১২. সাঈদুজ্জামান সম্রাট, সভাপতি, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন
১৩. দীপক চৌধুরী বাপ্পি, সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন
১৪. ফরহাদুল ইসলাম পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন
১৫. রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, সভাপতি, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন
১৬. নিজামুল হক বিপুল, সিনিয়র সাংবাদিক
১৭. মোঃ আশরাফ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব
১৮. মাইনুল হোসেন পিন্নু, সিনিয়র সাংবাদিক
১৯. আব্দুস সালাম শান্ত, সাধারণ সম্পাদক, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন
২০. খায়রুল আলম, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
২১. তৌফিক মারুফ, সিনিয়র সাংবাদিক
২২. রিয়াজুল বাশার, সিনিয়র সাংবাদিক
২৩. সোহেলী চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
২৪. গোলাম মুজতবা ধ্রুব, সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
২৫. ইসরাফিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক, টেলিভিশন প্রডিউসার এসোসিয়েশন (টিপিএ)
২৬. সাইফ আলী, সাবেক আইন সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
২৭. রাজু হামিদ, সাবেক প্রচার সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
২৮. জুবায়ের চৌধুরী, সাবেক জনকল্যাণ সম্পাদক ঢাকার সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
২৯. এ কে এম ওবায়দুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল
৩০. রেজাউল করিম রেজা, সাবেক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
৩১. সাজেদা পারভীন, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
৩২. মো. রমজান আলী, সিনিয়র রিপোর্টার, সকলের সংবাদ
৩৩. গাজী তুষার আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদক, দৈনিক ঢাকা
৩৪. ওয়ারেচ্ছুন্নবী খন্দকার, জিটিভি
৩৫. প্রদীপ চৌধুরী, সকাল সন্ধ্যা
৩৬. ঝর্ণা মনি, সাবেক নারী বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)
৩৭. ইখতিয়ার উদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক
৩৮. জে এম রউফ, সভাপতি, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিইউজে)
৩৯. হামিদ মোহাম্মদ জসিম, সদস্য সচিব, স্বাধীনতা সাংবাদিক পরিষদ
৪০. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম
৪১. মোঃ আলমগীর হোসেন, সহ-সভাপতি, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন
৪২. শামীমা দোলা, সিনিয়র সাংবাদিক
৪৩. এ জেড এম সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, সিনিয়র সাংবাদিক
৪৪. ফারজানা বিনতে হোসাইন (ফারজানা শোভা), সিনিয়র সাংবাদিক
৪৫. রফিকুল ইসলাম সুজন, সিনিয়র সাংবাদিক
৪৬. তৈমুর ফারুক তুষার, সম্পাদক, বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোর
৪৭. নাসরীন গীতি, নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
৪৮. শামীমা আক্তার, সাবেক সভাপতি, ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম
৪৯. কিবরিয়া চৌধুরী, সম্পাদক, দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ (বিএসপি)
৫০. শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পলিটিক্যাল রিপোর্টার্স ফোরাম
৫১. এম জহিরুল ইসলাম, সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিল

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like