মাথা থেঁতলে হত্যা: আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় ‘জানে না’ পুলিশ
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। যদিও হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল।
শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সোহাগ হত্যা মামলার তদন্তে অগ্রগতি বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
লালবাগ জোনের ডিসি মো. জসীম উদ্দীন বলেন, “নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।” আসামিরাও নির্দিষ্ট কোনো দলের কথা উল্লেখ করেনি বলেও দাবি করেন তিনি।
লালবাগ জোনের ডিসি মো. জসীম উদ্দীন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কারা ও কেন করেছে সেই বিবেচনায় তদন্ত ও মামলা পরিচালনা করা হয়। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। আসামিরাও নির্দিষ্ট কোনো দলের কথা উল্লেখ করেনি।”
যুবদল থেকে দুই নেতাকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল কোন বিবেচনায় এজাহারভুক্ত আসামিকে বহিষ্কার করেছে তারাই সেটি বলতে পারবে। আমাদের লক্ষ্য হত্যার মোটিভ উদঘাটন ও কারা এটি করেছে সেটির তদন্ত করা।”
হত্যার শিকার সোহাগের অতীত সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি এবং সে কেন হত্যার শিকার হয়েছে আমরা তা খতিয়ে দেখছি বলে জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “সোহাগ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গণমাধ্যমে অনেক বিষয় আসছে। আমরা দায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ওই নির্দিষ্ট দোকানে ভাঙারি ব্যবসা কারা করবে এটি নিয়ে ঝামেলা ছিল। তারা পরস্পর সম্পর্কিত। ভুক্তভোগী ও হত্যাকারীরা একসঙ্গে কিছুদিন ব্যবসাও করেছে। দোকান নিয়ে বিবাদকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।”
চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে মো. জসীম উদ্দীন বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো চাঁদাবাজির অ্যাঙ্গেলটি সামনে আসেনি। আমরা তাদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের তথ্য পেয়েছি।”
ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, “৯ জুলাই বিকেল আনুমানিক ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে মিটফোর্ডের তিন নম্বর গেট এলাকায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এতে একাধিক মানুষ একসঙ্গে হয়ে একজনকে হত্যা করেছে। এর পরপরই পুলিশ এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং দ্রুত সময়ে দুইজনকে গ্রেফতার করে। ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই।”
তিনি আরও বলেন, “সোহাগের বোন কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে মামলা করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাহমুদুল হাসান মহিন, রবিন প্রথম গ্রেফতার হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আলমগীর, লম্বা মুনির ও লিটনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপরাপর জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।”
কোতোয়ালি থানা মমলা নিতে অনীহার অভিযোগের জবাবে জসীম উদ্দিন বলেন, “এই ঘটনা ঘটার পরপর আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। পরদিন সকাল পর্যন্ত আমি থানায় উপস্থিত ছিলাম। কেউ যদি বলে থানা মামলা নিতে চায়নি, তাহলে এই তথ্য অসত্য। আমরা বরং বাদী খুঁজছিলাম। একজন এসেছে যিনি তার স্ত্রী পরিচয় দিয়েছে কিন্তু তিনি সোহাগের প্রাক্তন স্ত্রী। এরপর একজন তার ভাই দাবি করেছে। যিনি সোহাগের সৎ ভাই। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তাকে বাদী করতে চাইনি। পরে আমরা তার বোনকে বাদী করে মামলা নিয়েছি।”
ঘটাস্থলে আনসার থাকলেও কেন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জানতে চাইলে ডিসি লালবাগ বলেন, “আনসার আমাদের অধীনে না, তাদের আলাদা প্রশাসন রয়েছে। তারা এই বিষয়টি বলতে পারবে।”
সোহাগ (৩৯) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার আসামি যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকিকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। পরে সংগঠন থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায় কেন্দ্রীয় যুবদল।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের অপকর্মের দায় সংগঠন কোনোভাবেই নেবে না।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে গত ৯ জুলাই সোহাগকে পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় তৈরি হয়।
সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।