ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমল আরও

1

দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি মে মাসে আরও কিছুটা কমেছে।

- Advertisement -

- Advertisement -

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মে মাস শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

এপ্রিলে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।

বর্তমানে অনেক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ৯ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। তারল্যসংকটে থাকা অনেক ব্যাংক আবার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ আমানত মিলছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মে মাস শেষে ব্যাংকে মোট আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের মে মাসে ছিল ১৭ লাখ কোটি টাকার বেশি। সে হিসাবে এক বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আমানতে প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে, যা ওই মাসে ৭ দশমিক ২৬ শতাংশে নেমে যায়। এরপর থেকে এ হার ওঠানামা করলেও তা এখনও দুই অঙ্কে ওঠেনি।

আমানতের প্রবৃদ্ধি না বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), অর্থনীতিবিদ ও ট্রেজারি প্রধানরা বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন।

এর মধ্যে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়া, আড়াই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ, ব্যবসা সম্প্রসারণ না ঘটা ও বেকারত্বের মতো কারণগুলো উঠে এসেছে।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, “আমানতের একটা অংশ ট্রেজারি বিল-বন্ডের দিকে যাচ্ছে, কারণ এখাতে সুদের হার বেশি। এছাড়া অন্য কোন কারণ আমি দেখাতে পাচ্ছি না।”

বর্তমানে বিভিন্ন মেয়াদে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশের কাছাকাছি সুদ পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এতে সঞ্চয় কমছে।

“মাস শেষে সঞ্চয় থাকছে না; আয়ও বাড়েনি। তাহলে তো আমানতের প্রবৃদ্ধি কমবেই। তাছাড়া ব্যবসা সম্প্রসারণ হচ্ছে কম। বেসরকারি খাতেও ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কম।”

টানা সাত মাস থেকে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে। মে মাসে এ খাতে ঋণ ছাড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খানও মনে করছেন, আশানুরূপ ব্যবসা সম্প্রসারণ না ঘটা ও মূল্যস্ফীতির কারণে আমানত প্রবৃদ্ধিতে একটা প্রভাব পড়তে পারে।

তিনি বলেন, “ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয় কম হচ্ছে। এজন্য ব্যাংক খাতে টাকা আসছে কম। তবে সরকারি ও বেসরকারি নানা খাতে ব্যবসা বাড়লে আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যায়।”

আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সাধারণত ব্যাংক থেকে যখন ঋণ নেওয়া বেড়ে যায়, তখন আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যায়। কারণ সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ গেলে সেটা ব্যাংকেই আমানত হিসেবে ফিরে আসে। তখন টাকার সঞ্চালন বাড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করলে আমানতের প্রবৃদ্ধি অন্তত ১০ শতাংশ হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, বেকারত্বের হার বাড়ছে। এতেও আমানতের ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মানুষের হাতে কাজ থাকলে আয়ের কিছু অংশ আমানত হিসেবে ব্যাংকে আসে। সবশেষ হিসাব তো বলছে, কাজবিহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।

আমানত প্রবৃদ্ধি উন্নতি না হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মে মাসে কয়েকটি সংবাদ সম্মেলন ও অনুষ্ঠানে বলেছেন, মূলত ডলার পাচার হওয়ার কারণেই সেই পরিমাণ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে চলে গেছে। তাতে টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। এজন্য ব্যাংকগুলো আমানতে উচ্চ সুদ দিয়েও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারছে না।

You might also like