‘জনতার আদালতে’ আওয়ামী লীগের বিচার করবে এনসিপি

12

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘জনতার আদালতে’ আওয়ামী লীগের বিচার করবে।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও বিচার দাবিতে এনসিপির সমাবেশে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এনসিপির নেতৃত্বে আসা এই নেতা বলেন, “পাড়া-মহল্লায় আপনারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরি করুন। আমরা জনতার আদালত তৈরি করব। এই সরকার আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে আমরা বসে থাকব না। জনতার আদালতে আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
ওই আন্দোলনে প্রাণহানির জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তার সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। জুলাইয়ের সেসব নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করারও উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেকে এখন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি তুলছে এনসিপি।
এনসিপির বেশিরভাগ শীর্ষনেতা গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা। শুরু থেকেই তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে।
সমাবেশে নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশন নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। বলেন, “এই সরকারের নির্বাচন কমিশন এখনও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করতে রাজি নয়। অথচ নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে, তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। আমরা সন্দেহ করছি-এই নির্বাচন কমিশন আগামীতে কাদের স্বার্থে কাজ করবে?”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের নয় মাস পার হলেও এখনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানাতে হচ্ছে—এটি আমাদের একটি সামষ্টিক ব্যর্থতা।”
সরকারের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, “নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও তাদের বিচার কার্যক্রমে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। আহত ও শহীদদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।”
এসময় সাংবাদিকদের সমালোচনা করেন এনসিপি আহ্বায়ক। তিনি বলেন, “কিছু সাংবাদিক এখনও প্রশ্ন করতে সাহস পাচ্ছে, আদালত শেখ হাসিনাকে গণহত্যাকারী হিসেবে ঘোষণা করেছে কি না। এসব সাংবাদিক আসলে সাংবাদিক নন, তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর।”
তিনি আরও বলেন, “অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। নৌকা প্রতীককে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
এদিকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও তাদের বিচার নিশ্চিতে বাংলাদেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দলের নেতাকর্মীদের ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ গড়ে তোলার আহ্বান এনসিপি।
দলটি বলছে, এই মঞ্চ থেকেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ প্রশ্নের মীমাংসা করা হবে।
দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বাংলাদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে আপনারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ গড়ে তুলুন। ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের সদস্যরা তাদের জীবন দিয়ে হলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নের মীমাংসা করে ছাড়বে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “অতীতের মতো সুশীল তত্ত্বাবধায়ক সরকার আপনারা না। আপনারা গণঅভ্যুত্থানের সরকার। যে আওয়ামী লীগ গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধাটা কোথায়? নিবন্ধনের খাতা থেকে তাদের নাম কেটে সন্ত্রাসীদের খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দায় শুধু জাতীয় নাগরিক পার্টির না। এই দায় ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি পক্ষের। সকলে মিলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রশ্ন অমীমাংসিত রেখে সামনে কোনো নির্বাচন হবে না।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও নতুন সংবিধানের দাবি
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা জুলাই সনদের কথা বলেছি, কিন্তু নানা ষড়যন্ত্রের কারণে সেটি এখনও কার্যকর করা যায়নি। অবিলম্বে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে এই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কথা স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি নতুন সংবিধানের কথা বলছি। এজন্য আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন একসাথে করতে হবে।”
নাহিদ বলেন, “শহীদ ও আহতদের পরিবারগুলোর দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। তাদের মানবিক ও নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।”
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “আমাদের হাতে সময় কম, কিন্তু দায়িত্ব অনেক। ৫ আগস্ট জাতি যে আস্থা এনসিপির উপর রেখেছিল, আমরা বিশ্বাস করি আগামীতেও জনগণ আমাদের ওপরই আস্থা রাখবে।”
“আমরা দ্রুত সংঘটিত হবো, একটি সুশৃঙ্খল দল হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাব। আমরা প্রতিটি দরজায় গিয়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেব।”
নাহিদ বলেন, তারা নতুন বন্দোবস্ত এবং ‘সেকেন্ড রিপাবলিকের’ জন্য এনসিপি গঠন করেছেন।
“আমরা দায় ও দরদের একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করব। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধকে সম্মান রেখে আমরা নতুন সমাজ গঠন করব। ইনশাআল্লাহ, এই বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ এশিয়ার কাণ্ডারি হবে ঢাকা। ঢাকায় এই অঞ্চলকে নেতৃত্ব দিবে।”
সমাবেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপি নেতা তাসনিম জারা, সামান্তা শারমিন, মুনিরা শারমিন, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, আরিফুল ইসলাম আদীবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like