নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে: তারেক রহমান

4

নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই মধ্যে ‘তালবাহানা’ দেখতে পারার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।”
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, “যে কোনো দলের তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক সরকার, দরকার একটি নির্বাচিত সরকার।”
নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে বলেও জোরের সঙ্গে বলেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন. “অতীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। এবং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। কিন্তু আজ আমরা দেখেছি ১০ মাস পার হয়ে গেল অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না।
“আবারও আমরা বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তরুণ প্রজন্মের ভাইয়েরা ও দেশবাসী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে কারা প্রতিনিধি হবে, সেটা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনারা নির্বাচিত করুন।”
সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে তারেক বলেন, “গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়েছেন। এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে পছন্দমতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাননি। কথিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না।”
তারেক রহমান বলেন, “এরই মধ্যে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্ভুক্তি সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।”
নয়াপল্টনের সামনে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে জমায়েতে বিএনপি তার শক্তি প্রদর্শন করেছে।
পুথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তি মানসিকতা সংস্থার অনেক বেশি জরুরি বলে মত দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “উত্তর কোরিয়ার সংবিধানের লেখা রয়েছে ‘ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ নর্থ কোরিয়া’। সুতরাং কী লেখা আছে তার থেকেও বেশি জরুরি, মেনে চলা।
নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্য তাই কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।”
“জনগণকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না” বলে মন্তব্য করে তারেক বলেন, “যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। নির্বাচন করুন।
“ভবিষ্যতে যদি জনগণের সরকারের প্রায় পান তাহলে সরকারের যোগদান করুন।”
আদালতের রায় পাওয়ার পরেও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারেক রহমান। তার অভিযোগ, সরকার আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে।
“এই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। আমরা দেখেছি আদালতে রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে।”
আদালতের রায় পাওয়ার পরও ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব না দেওয়ায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন তারেক রহমান।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, “আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে, তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি?”
ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণ বা শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টির কারণে আবারও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাওয়ার কথাও বলেন তিনি।।
অন্তর্বর্তী সরকারের দশম মাসে এসে বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে জোরাল দাবি জানাচ্ছে। গত ২২ মে দলটি বলেছে, এই দাবি পূরণ না হলে তারা সরকারকে আর সহযোগিতা করবে না।
সেদিনই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে সেদিন সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে তুমুল আলোচনার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান সরকারকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার পরামর্শ দেন।
গত শনিবার বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে এবং পরের দিন ছোট ছোট ২০টি দলের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি লিখিতভাবে তুলে ধরে। তবে অন্য কোনো দল এমন দাবি জানায়নি। বরং তারা চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে ইউনূসের বক্তব্যে আস্থা রেখেছে বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব।
শনিবার রাতে বিএনপির দাবির বিষয়ে সরকারের তরফে কোনো আশ্বাস না আসার তিন দিন পর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি হতাশা প্রকাশ করে। তার পরদিন তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সমাবেশে বিএনপির শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের যে কথা বলেছিলেন, সেটিকে ‘নাটক’ আখ্যা দেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like