শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের মধ্যে মুজিবুল হক চুন্নুকে সরিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব করা হয়েছে।
সোমবার দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরে প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী এ তথ্য জানান।
গত বছরের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বেকায়দায় রয়েছে সাবেক স্বৈরশাসক এই এম এরশাদের দল জাতীয় পার্টি।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যের কারণেই দলটি রাজনীতির মাছে সুবিধা করতে পারছে না। এরমধ্যে দলের সম্মেলন নিয়ে আবারও ভাঙনের মুখে পড়ে দলটি।
২০২১ সালে জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব হন চুন্নু। চুন্নু ২০১৪ সালের শেখ হাসিনার সরকারে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী সংসদে বক্তব্যের কারণে অনেকেরই নজর কাড়েন। গাইবান্ধার সাবেক এই সংসদ সদস্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জিততে পারেননি।
দলীয় নেতৃত্বের কোন্দলের মধ্যেই জিএম কাদের দলের প্রেসিডিয়ামের এই সদস্যকে শীর্ষ নেতৃত্বে আনলেন।
২৮ জুন চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দলীয় সম্মেলনের দিন ঠিক করেছিলেন জিএম কাদেরর নেতৃত্বাধীন দলটি। ওই তারিখে প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি থাকায় সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানের অনুমতি পায়নি দলটি।
এরপর জিএম কাদের সম্মেলন স্থগিত করে দেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।
বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বের হয়ে যেসব দল গঠিত হয়েছে, তাদের শীর্ষ নেতাদেরও এক মঞ্চে এনে ঐক্যের উদ্যোগ নেন তারা। সেজন্য এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন অংশের নেতাদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।
সম্মেলনকে ঘিরে দুইপক্ষে কার্যত দুই পক্ষে আছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। একপক্ষে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তার অনুসারীরা। অন্য পক্ষে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ আরও কয়েকজন।
মূলত ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ তকমা থেকে দলকে বের করে আনতে কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনে জোর দিচ্ছিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন তালুকদাররা।
নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর প্রথমবারের মত ভাঙে জাতীয় পার্টি। ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা ভাঙন হয়।
কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে, ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপায় পঞ্চমবারের মত ভাঙন ধরে জাতীয় পার্টিতে।
এরশাদ মারা যাওয়ার পর সবশেষ ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাগ হয়ে যায়।
দায়িত্ব পেয়েই দলকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি নির্বাচনে দলের হারানো আসনগুলো উদ্ধারে কাজ করার কথা জানান শামীম হায়দার পাটেয়ারী।
মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শামীম হায়দার বলেন, “জাতীয় পার্টির মত বৃহৎ দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দলের চেয়ারম্যান আমাকে অর্পন করেছেন এ জন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূলকে নিয়ে ঢেলে দল সাজাব, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে। একই সঙ্গে আমাদের হারানো আসনগুলো উদ্ধার করব, জেলা ও বিভাগীয় পর্য়ায়ে যাব।’’
শামীম হায়দার আরও বলেন, ‘‘উপজেলা সিস্টেম আমাদের নেতা এরশাদ করেছিলেন, আমরা উপজেলায় জাতীয় পার্টিকে রিভাইভ করব। সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি নতুন জাতীয় পার্টি গড়ে সুন্দর বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলব।’’