বিশ্বের বহু দেশ ‘বাণিজ্যচুক্তি করতে আগ্রহী’ দাবি করে শুল্ক স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষায়, “সবাই আমার পা ধরছে, তাই শুল্ক স্থগিত রেখেছি।”
ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান কংগ্রেশনাল কমিটির বার্ষিক ডিনারে ৯০ মিনিটের বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন, “আমি জানি আমি কী করছি। তোমরাও জানো আমি কী করছি। তাই তো তোমরা আমাকে ভোট দিয়েছ।”
বিশ্বনেতাদের অবস্থান নিয়ে ব্যঙ্গ করে ট্রাম্প বলেন, “সব দেশ আমাদের ফোন করছে। আমার পা ধরছে। তারা বলছে, ‘দয়া করে স্যার, একটা চুক্তি করুন। আমরা সবকিছু করতে রাজি।’”
এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর তিনি ঘোষণা দেন, চীন ছাড়া অন্য দেশগুলোর ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। তবে যেসব দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি, কেবল তারাই এ সুবিধার আওতায় থাকবে এবং তারা আপাতত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক দেবে।
ট্রাম্প বলেন, “৭৫টিরও বেশি দেশ আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। তারা বাণিজ্য, শুল্ক, মুদ্রানীতি ও অন্যান্য বাধা নিয়ে সমঝোতায় আগ্রহী।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রেজারি সেক্রেটারি ল্যারি সামার্স সতর্ক করে বলেছেন, “এই শুল্কের রাজনীতি আসলে মার্কিন অর্থনীতির ওপর নিজেদেরই সবচেয়ে বড় আঘাত।”
কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যদের একটি অংশ এরইমধ্যে একটি প্রস্তাব এনেছেন, যাতে ভবিষ্যতে নতুন শুল্ক আরোপের আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “কিছু বিদ্রোহী রিপাবলিকান বলছে কংগ্রেস শুল্ক নিয়ে আলোচনা নিয়ন্ত্রণ করুক। কিন্তু ওরা আমার মতো করে কখনোই আলোচনা করতে পারবে না।”
এদিকে শুল্ক বিরতির ঘোষণা স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক্সে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
চীনের ওপর ১২৫% শুল্ক, পাল্টা জবাব বেইজিংয়ের
অন্য দেশগুলোর ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অবস্থান আরও কঠোর করেছেন ট্রাম্প। তার ভাষায়, “চীন বিশ্ববাজারের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছে।” সেই ‘অসম্মান’-এর জবাবেই চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের হার বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন তিনি।
ট্রাম্পের ভাষ্য, “চীন শুধু আমাদের পণ্য নকল করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা বাজারে ভয়াবহ রকমের অসন্তুলন তৈরি করেছে। এখন তাদের বুঝতে হবে, আমেরিকার সঙ্গে কারবার করতে গেলে শর্ত মানতে হবে।”
ওয়াশিংটনের এই ঘোষণার ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীন জানিয়ে দেয়, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। যা আগে ছিল ৩৫ শতাংশ।
বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে অর্থনৈতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। আমরা আত্মরক্ষা করছি। এটা প্রতিশোধ নয়, ন্যায্য জবাব।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় চাপ বাড়াচ্ছে। দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির এই সংঘাতে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে অনিশ্চয়তা। ইতোমধ্যে প্রযুক্তি ও কৃষিপণ্য খাতে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।