পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার জেরে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলোর জন্য নিজেদের বন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানি সংবাদপত্র ডনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবারের এই ঘোষণা ভারতের একই ধরনের সিদ্ধান্তের পাল্টা পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
একইদিন সকালে ভারত ঘোষণা দেয়, পাকিস্তানি পতাকাবাহী কোনো জাহাজ ভারতীয় বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং ভারতীয় জাহাজও পাকিস্তানি বন্দরগুলো ব্যবহার করবে না।
ভারতের নৌপরিবহন অধিদপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতীয় সম্পদ, কার্গো ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জনস্বার্থে এই নির্দেশনা জারি করা হলো।”
এর কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের ‘পোর্টস অ্যান্ড শিপিং উইং’ থেকেও অনুরূপ নির্দেশনা আসে।
তাতে বলা হয়, “পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামুদ্রিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে- পাকিস্তান তার সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার্থে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে: ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ কোনো পাকিস্তানি বন্দরে ঢুকতে পারবে না, পাকিস্তানি জাহাজও ভারতীয় বন্দরগুলোতে ঢুকবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বিবেচনা করা হবে।”
এর আগেও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় ভারত। তবে আকাশসীমা বন্ধের পদক্ষেপটি পাকিস্তানই আগে নিয়েছিল।
একই সঙ্গে ভারতে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ও নেতাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক বছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৯ সালের আগস্টে ভারতের কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর পাকিস্তান ভারতকে ইসরায়েলের সমপর্যায়ের বানিজ্যিক অবস্থানে নামিয়ে আনে, যার সঙ্গে ইসলামাবাদের কোনো বাণিজ্য নেই।
শনিবার ভারত আরও এক ধাপ এগিয়ে পাকিস্তান থেকে যাওয়া বা পাকিস্তান হয়ে আসা সব ধরনের পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করে। একইসঙ্গে পাকিস্তান থেকে আসা সকল ডাক ও পার্সেল আদান-প্রদানও স্থগিত করা হয়।
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হলো।”
২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর দুই দেশের মধ্যে ডাকসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরের নভেম্বরে তা আংশিক পুনরায় চালু হলেও পার্সেল সেবা এখনো চালু হয়নি বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই।
পেহেলগাম হামলার পর ভারতের একের পর এক আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে—সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ, আকাশসীমা বন্ধ এবং ভারতীয় কূটনীতিক বহিষ্কার।
তবে মানবিক বিবেচনায় পাকিস্তান চলতি সপ্তাহে আফগানিস্তান থেকে আসা ভারতগামী পণ্যবাহী ১৫০টি ট্রাককে ওয়াঘা সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি দেয়, জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন। ২০০০ সালের পর এটিই কাশ্মীরের অন্যতম প্রাণঘাতী হামলা বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ভারত হামলার পেছনে ইসলামাবাদকে দায়ী করে সীমান্ত পারাপারের যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিলেও কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করে আন্তর্জাতিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যায়। পাকিস্তান সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে, যুদ্ধবিমানের নিয়মিত টহলও জোরদার করেছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীকে ‘অপারেশনাল ফ্রিডম’ দিয়েছেন। যার আলোকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তারা স্বাধীনমত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।