পাকিস্তানে ভারতের আক্রমণ

পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে হামলা চালানোর কথা বলেছে ভারত।

17

পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত। বুধবারের এ অভিযানে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে।
জবাবে পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। সংঘর্ষের মাত্রা দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি গত দুই দশকের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা।
নয়াদিল্লি বলছে, তারা পাকিস্তানের ভেতরে থাকা নয়টি ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’তে বিমান হামলা চালিয়েছে। ভারতের দাবি, এসব স্থাপনার কয়েকটি গত মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর চালানো হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। ওই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হন।
অন্যদিকে ইসলামাবাদ বলছে, ভারতের হামলার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের ছয়টি এলাকা। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন।
নয়াদিল্লি এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “লক্ষ্য বাছাই এবং অভিযানের কৌশলে ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।”
রয়টার্সকে দেওয়া এক তথ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, ইসলামপন্থী গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তইবার সদর দফতরে হামলা চালানো হয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, “সবকিছুই আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে করা হয়েছে। পাকিস্তান অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি রাষ্ট্র। তবে দেশের সম্মান, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ আমরা নেব, যে কোনো মূল্যেই হোক না কেন।”
পাকিস্তান এই হামলাকে “স্পষ্টত যুদ্ধ ঘোষণার শামিল” বলে অভিহিত করেছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় জবাব দেওয়ার অধিকার তারা সংরক্ষণ করছে।
বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায় মুজাফ্ফরাবাদের বাসিন্দাদের
বিবিসি জানিয়েছে, হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মিরে, দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ব্যাপক গোলাগুলি এবং মর্টার হামলার খবর দিয়েছে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ভারত হামলা শুরু করার পর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফ্ফরাবাদে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা বলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিলাল মসজিদের পাশে এক বাড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ ওহিদ বলেন, “আমি গভীর ঘুমে ছিলাম, হঠাৎ বিস্ফোরণে আমার বাড়ি কেঁপে ওঠে।
“আমি দৌড়ে রাস্তায় বের হয়ে দেখি, আশেপাশের লোকজনও একইভাবে বেরিয়ে এসেছে। আমরা বুঝে ওঠার আগেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, পুরো এলাকায় আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।”
ওহিদ বলেন, তাদের এলাকায় ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন;তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
“শিশুরা কাঁদছে, নারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। আমরা সবাই ভীত। কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, আর এই অনিশ্চয়তা যেন আমাদের গিলে খাচ্ছে।”
তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনী উপস্থিত ছিল। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না কেন একটি মসজিদ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হল।
“এটা একেবারে সাধারণ একটা পাড়ার মসজিদ, যেখানে আমরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। এখানে কখনোই কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখিনি।”

 

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like