ভারত হঠাৎ করে বাংলাদেশের পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা বাতিল করলেও এতে বাণিজ্যে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, “সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই সংকট মোকাবিলা করবে এবং বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলবে।”
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় এই কথা বলেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন পণ্য সড়কপথে ভারতের দিল্লি ও কলকাতা বন্দর হয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এই পণ্য পরিবহনে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে কি না—জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এখনই ভারতকে কোনো চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছি না।”
মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অভ ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) একটি সার্কুলার জারি করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির যে অনুমতি ছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়।
আগের নীতিমালায় ভারতীয় ভূমি শুল্ক স্টেশন (এলসিএস) ব্যবহার করে বাংলাদেশ তৃতীয় দেশে রপ্তানির জন্য পণ্য পরিবহন করতে পারত। এ প্রক্রিয়ায় শুল্ক স্টেশন থেকে এসব পণ্য পরবর্তীসময়ে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরে পাঠানো হতো।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বা কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতের স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে দেশটির অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল ২০২০ সালের ২৯ জুনের ওই সার্কুলারে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, বর্তমানে ট্রানজিটে থাকা বাংলাদেশি পণ্য বিদ্যমান প্রক্রিয়ার আওতায় ভারত ছাড়তে পারবে, তবে নতুনভাবে কোনো পণ্যের চালান ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাবে না।
ওই সার্কুলারের ভিত্তিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের মত দেশের সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বুধবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “বাংলাদেশকে দেওয়া দীর্ঘদিনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা আমাদের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে তীব্র পণ্যজট তৈরি করছিল। এতে লজিস্টিকস সমস্যা ও অতিরিক্ত ব্যয় আমাদের নিজস্ব রপ্তানি কার্যক্রমকে ব্যাহত করছিল। এসব কারণেই ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সুবিধাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন বলেন, “এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক খবর। গতকাল (বুধবার) ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আরও তৎপরতা চালাব।”
তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “এটি সাময়িক স্থগিতাদেশ। দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোসহ মার্কিন আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করতে হবে। মূল আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি কীভাবে সমন্বয় করা…। আমরা সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কাজ করছি।”