ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না কানাডা: কারনির হুঁশিয়ারি

7

ফেডারেল নির্বাচনে সদ্য জয় পাওয়া কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেছেন, “তার দেশ কখনওই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।”
নির্বাচনে জয়ের পর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় ফেরা লিবারেল পার্টির নেতা কারনি বলেন, “আমি এই দেশের প্রত্যেক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করব—যারা কানাডাকে নিজেদের বাড়ি বলে মনে করে।”
নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ট্রাম্প প্রশাসনের একের পর এক উসকানি, শুল্ক আরোপ এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে হুমকি পুরো নির্বাচনজুড়েই মূল ইস্যু হয়ে ওঠে।
কারনি বলেন, “আমি মাসের পর মাস ধরে সতর্ক করে আসছি—আমেরিকা আমাদের জমি, সম্পদ, পানি, এমনকি দেশটাই চায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের ভাঙতে চাইছেন যেন আমেরিকা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু তা কখনওই হবে না।”
তিনি বলেন, “আমরা আমেরিকার বিশ্বাসঘাতকতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। তবে সেই অভিজ্ঞতা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। এখন সময় আমাদের নিজেদের দেখার, একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর।”
কারনির দল লিবারেল পার্টি আবার ক্ষমতায় ফিরলেও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৭২টি আসন। সিটিভি বলছে, এটা একটি সংখ্যালঘু সরকার হবে। অন্যদিকে সিবিসি জানিয়েছে, বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।
প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়লিভর পরাজয় স্বীকার করে বলেন, “এটা একটি রেজর-পাতলা সংখ্যালঘু সরকার।”
সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকার মার্ক কারনি এর আগে কখনও নির্বাচিত রাজনৈতিক পদে ছিলেন না। তবে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট এবং যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করার পর লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে আসেন কারনি। তখন থেকেই ট্রাম্প-বিরোধিতা এবং কানাডার সার্বভৌমত্ব রক্ষা তার নির্বাচনী প্রচারের মূল প্রতিশ্রুতি হয়ে দাঁড়ায়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম রাজ্য’ বানানোর হুমকি দেন, তখন কারনি তার জবাবে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপা শুল্কনীতি কানাডার অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছে। ট্রাম্প সরকার কানাডার স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি, ওষুধ এবং কাঠের পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে। এতে রপ্তানি নির্ভর শিল্পখাত চাপে পড়েছে এবং দেশের অর্থনীতি মন্দার আশঙ্কায় রয়েছে।
তবে কারনি বলেন, “আমাদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে, কিন্তু আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াব। এই দেশে আবার ঘরবাড়ি বানাব, কারখানা গড়ব, পরিচ্ছন্ন ও প্রচলিত জ্বালানির নতুন উৎস তৈরি করব—যাতে আমেরিকার ওপর নির্ভর না করতে হয়।”
বিতর্কের মুখে জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে কারনি ইউরোপ গিয়েছিলেন এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নেতাদের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, “যখন আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বসব, তখন সেটা হবে দুই স্বাধীন দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে। আর তখন আমরা জানব, আমেরিকা ছাড়া আমাদের সামনে আরও অনেক বিকল্প আছে।”
এই নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেয়েছে মধ্য-বামপন্থী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। দলটি প্রয়োজনীয় আসন না পাওয়ায় দলীয় মর্যাদা হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। দলের নেতা জাগমিত সিং নিজে তার আসন হারিয়েছেন এবং পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সামনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব—পুরো কানাডার প্রতিনিধিত্ব করা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।”

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like